রোজা রেখে অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে কী করবেন!

রোজার মাসে সবাই যেন খাবারের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। সারা দিন না খাওয়ার অভাবটুকু ইফতারে পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কি এই প্রতিযোগিতা? কে কত খেতে বা রান্না করতে পারে। কিন্তু এসব ভাজাপোড়া, গুরুপাক খাবার খেয়ে কী হতে পারে, তাও জেনে রাখা জরুরি। সারা দিন রোজা রেখে পাকস্থলী খুব ক্ষুধার্ত ও দুর্বল থাকে। তারপর যদি এত রকম গুরুপাক খাবার একসঙ্গে খেলে পেটের সমস্যা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, অবসাদ, আলসার, অ্যাসিডিটি, হজমের সমস্যা ইত্যাদি দেখা দেবে।

পুষ্টিবিদের পরামর্শ
পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার বলেন, রোজায় দামি খাবার খেতে হবে এমন নয়; বরং সুষম, সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। গুরুপাক খাবার, পোড়া তেল, বাইরে ভাজা চপ, পেঁয়াজি, বেগুনি, কাবাব, হালিম, মাংসজাতীয় খাবার না খাওয়া ভালো। এতে হজমে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ইফতারে যা খাবেন
দিনের বেলায় দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে রোজার শেষে শরীর, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকোষ খাবারের মাধ্যমে তাত্ক্ষণিক শক্তির জোগান চায়। তাই দীর্ঘ সময় পর ইফতারে খাবারটাও তেমন সহজ ও সুপাচ্য হওয়া চাই। চাই স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর ও সুষম খাবার। দামি খাবার খেতে হবে এমন ধারণা সঠিক নয়।

নিজেকে ইফতারির সামনে সংযত করুন। আস্তে আস্তে খাওয়া শুরু করুন। খেজুর খেয়ে ইফতার শুরু করতে পারেন। এরপর সাধারণ পানি এক থেকে দুই ঢোক পান করুন। তারপর এক গ্লাস বানানো ফলের শরবত হলে ভালো হয়। এভাবে আস্তে আস্তে বাকি খাবার খান। পুরো পেট ভরে খাবেন না, বরং পেট খালি রাখবেন। তারপর প্রয়োজন মতো কিছুক্ষণ পরপর পানি খাবেন।

চিড়া, চালের জাউ ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। ইফতারের পর রাতের খাবারটাও কিছুটা হালকা ও সহজে হজম হয় এমন হওয়া উচিত। ভাতের সঙ্গে সবজি বেশি থাকা চাই। তা না হলে এই সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য হবে নিত্যসঙ্গী। লাউ, লাউশাক, মিষ্টি কুমড়া, শসা, পটোল, ঝিঙে, কচুশাক, কচু ইত্যাদি ঝোলের তরকারি হিসেবে খেতে পারেন। এক টুকরা মাছ অথবা এক টুকরা মাংস খেতে পারেন।

বেশি বেশি চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিলে ভালো হয়। বাদ না দিতে পারলে অল্প পরিমাণে খেতে পারেন। এটা খুব তাড়াতাড়ি রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ওজন বাড়ায়। তাই যতটা সম্ভব চিনি ও চিনিযুক্ত খাবার কম খান। মাঝে মাঝে গরম পড়ছে, তাই ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি না খেলে হজমের সমস্যা হবে। ইফতারের পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত একটু পরপর পানি খেতে হবে।

সাহ্‌রিতে যা খাবেন
খুব বেশি পরিমাণে খাবার না খেয়ে রুচি অনুসারে স্বাভাবিক খাবার খাবেন। পেটের এক-চতুর্থাংশ খালি রাখবেন। আর মনে রাখবেন, একজন মানুষের সারা দিন যে পরিমাণ পানি ক্ষরিত হয়, সেই পরিমাণ রাতে পান করা উচিত। সেহরির সময় শেষ হওয়ার ১ ঘণ্টা পূর্বে সেহরি করুন, শেষ সময়ে কয়েক মিনিটে সেহরি করবেন না। সেহরিতে সারাদিনের পানি শূন্যতা পূরণের জন্য রোজা রাখতে কমপক্ষে ১ লিটার পানি পান করুন, সেহরি খাওয়ার ১০-১৫ মিনিট আগে ৫০০ মিলিলিটার পানি পান করুন, সেহরি খাওয়ার পর ৫০০ মিলিলিটার পানি পান করুন।

সেহরি খাওয়ার সময়ে খেজুর বা খুরমা খাবেন ২-৩টি, এটি আপনার সারাদিনের পানি শূন্যতা পূরণের পাশাপাশি শর্করা, চিনি, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, কপার, সালফার, ম্যাঙ্গানিজ, সিলিকন ও ক্লোরিন সরবরাহ করবে। সেহরিতে হালকা মশলা, কম তেলে রান্না করা খাবার গ্রহণ করুন।সেহরিতে ভাত, রুটি, সবজি, ডাল, মাছ, মাংস ও পরিমিতভাবে খাবেন।কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খান। যেমন কলা, ওটস, রুটি ইত্যাদি।সেহরিতে খাবার পর ফল খাবেন।

রোজায় অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে কী করবেন?
প্রথম ও প্রধান করণীয় হলো যেসব খাবারে অ্যাসিডিটি হয় বা হচ্ছে যেমন: ভাজাপোড়া, চর্বিজাতীয় খাবার ইত্যাদি বেশি গ্রহণ করা যাবে না। খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে পারলে বেশি ভালো। সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করা উচিত। একেবারে পেট ভরে খাবার গ্রহণ করা যাবে না। খাবার গ্রহণের পর হাঁটাহাঁটি করা উচিত। বিশেষ করে নামাজের আগে পেট পুরে না খেয়ে বা খেলে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করার পর নামাজ পড়া উচিত। শোবার সময় মাথা উঁচু করে শুতে হবে। অ্যাসিডিটির কারণে পেটে ব্যথা হলে অ্যাসিডিটি কমানোর ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, ইফতারের পর হঠাৎ পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। যা মারাত্মক হতে পারে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মনে রাখবেন
খাদ্যতালিকায় সব ধরনের খাবার অর্থাৎ সুষম খাবার খাচ্ছেন কি না। যেমন: আমিষ, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন, দুধ, দই, মিনারেল, আঁশ ইত্যাদি। ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত খাচ্ছেন তো? যেমন: লাল আটা, বাদাম, বিচি, শস্য, ছোলা, ডাল ইত্যাদি খেতে হবে। এগুলো হজম হয় আস্তে আস্তে, তাই অনেক সময় পর ক্ষুধা লাগে। রক্তে চিনির পরিমাণ তাড়াতাড়ি বাড়ে না।

চা, কফি খাওয়ার মাত্রা কমাতে হবে। তা না হলে পানিশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ঘুমের সমস্যা হতে পারে। বাদ দিতে হবে মশলায় ছোলা ভুনা, পেঁয়াজি, বেগুনি, চপ, হালিম, বিরিয়ানি ইত্যাদি। ঠান্ডা খাবার খেতে পারেন। তাহলে সারা দিন রোজা রাখা নাজুক পাকস্থলী ঠিকমতো খাবার হজম করতে পারবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ইসবগুল খেতে পারেন। বেশি দুর্বল লাগলে ডাবের পানি বা স্যালাইন খান ইফতারের পর। কোমল পানীয় খেলে ঘুমের সমস্যা, অ্যাসিডিটি, আলসার বাড়তে পারে। তাই কোমল পানীয়কে সারা জীবনের জন্য পারলে বাদ দিন। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরাও রোজা পালন করতে পারবেন, তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধের ডোজ, খাবারদাবার ও নিয়মকানুন জেনে নেওয়াই ভালো।

ডা. মো. শরিফুল ইসলাম তথ্যসুত্রঃ দেহ.কম

Related Posts

গলার অতিরিক্ত চর্বি কমানোর ১০টি সহজ উপায়…

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই লক্ষ্য করছেন তো জিনিসটা? আর ভাবছেন কী বাজে লাগছে মুখটা! অতিরিক্ত কী একটা ঝুলছে! আজ্ঞে হ্যাঁ, আমি গলায় জমে থাকা…

জানেন কি গরমে খাবারের চার্ট কেমন হওয়া উচিত?

গরমে অস্বস্তিতে সবাই। এরমধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অনেকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শারীরিক অসুবিধা দেখা দিচ্ছে। তাই গরমে সুস্থ থাকতে ঠিকঠাক খাবার চার্ট খুবই জরুরি-…

বয়স অনুযায়ী আপনার শিশুর প্রতিদিন কতটুকু পানি প্রয়োজন

বাচ্চার কতটুকু পানি প্রয়োজন সেটি আসলে নির্ভর করে বাচ্চার অবস্থা, ওজন ও বয়সের ওপর। জ্বর বা অসুখের সময় পানির বেশি প্রয়োজন। বেশি গরম পড়লে, খেলাধুলা করলে বেশি…

শারীরিক সৌন্দর্য বারাতে ও ওজন কমাতে রইল ১৪ টি সহজ ঘরোয়া উপায়

মাঝে মাঝে ব্যয়াম ও কখনো কখনো ডায়েট করে ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জন করাটা আসলেই দুঃসাধ্য।শরীরের বাড়তি মেদ নিয়ে আজকাল অনেকেই চিন্তিত। সুস্বাস্থ্যের জন্য তো বটেই, শারীরিক সৌন্দর্যের…

ওভেনের খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়!

কম সময়ে খাবার গরম করতে মাইক্রোওয়েভ ওভেনই ভরসা। আধুনিক এই যন্ত্রটি জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। নামমাত্র সময়ে ঠান্ডা খাবার গরম করার এর চেয়ে ভাল উপায় আর নেই।…

মিষ্টি কি আসলেই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?

চিনি, শর্করা, সুগার – যে নামেই ডাকুন, গত কয়েক দশকে বিজ্ঞানী আর ডাক্তারদের ক্রমাগত সতর্কবার্তার ফলে এটা হয়ে দাঁড়িয়েছে জনস্বাস্থ্যের এক নম্বর শত্রু। সরকার এর ওপর কর…