যে ৯ কারনে অবশ্যই তেঁতুল খাবেন

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা যায় শরীরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়াতে তেঁতুলের জুড়ি মেলা ভার।
আসলে এর শরীরে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান দেহের অন্দরে প্রদাহ কমানোর মধ্যে দিয়ে একাধিক রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সেই সঙ্গে দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে, ত্বকের পরিচর্যায় এবং আরও নানা শারীরিক উন্নতিতে এই ফলটির কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে।
তাই রোগ মুক্ত সুস্থ শরীর যদি পেতে চান, তাহলে সপ্তাহে কম করে ৫ দিন তেঁতুল খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে।

১. ত্বক ভালো রাখে :

তেঁতুলে আছে নানাবিধ উপকারি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার এবং ভিটামিন ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি ত্বকের বয়স কমাতে এবং বলিরেখা ভ্যানিশ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
তাই শরীরের বয়স বাড়লেও ত্বকের বয়স একই থাকুক, এমনটা যদি চান, তাহলে ত্বকের পরিচর্যায় তেঁতুলকে কাজে লাগাতে ভুলবেন না যেন! এক্ষেত্রে ১ চামচ তেঁতুল নিয়ে তার সঙ্গে ১ চামচ বেসন এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে।
তারপর সেটি মুখে লাগিয়ে কম করে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
সপ্তাহে ১-২ বার এই ভাবে ত্বকের পরিচর্যা করলে দারুন উপকার পাবেন।

২. ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে:
সরাসরি না হলেও প্ররোক্ষভাবে রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেঁতুল দারুনভাবে কাজে এসে থাকে।
আসলে এই ফলটিতে উপস্থতি বেশ কিছু এনজাইম, কার্বোহাইড্রেটের শোষণ মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফল ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
এখন প্রশ্ন করতে পারেন কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে সুগারের কী সম্পর্ক? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা বাড়তে থাকলে নানা কারণে রক্তে শর্করার মাত্রাও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সেই কারণেই তো অনিয়ন্ত্রত মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেতে মানা করেন চিকিৎসকেরা।

৩. হার্টের ক্ষমতা বাড়ে:

একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে তেঁতুলে থাকা একাধিক ভিটামিন এবং খনিজ ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
সেই সঙ্গে রক্তে উপস্থিত বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।
আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে হার্টের কর্মক্ষমতা কমাতে ব্লাড প্রেসার এবং কোলেস্টেরল কোনও খামতিই রাখে না।
তাই শরীর যখন এই দুই ক্ষতিকর রোগ থেকে দূরে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই হার্টের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটার কোনও সুয়োগই থাকে না।
এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন তেঁতল খাওয়া কতটা জরুরি।

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:

প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি থাকার কারণে তেঁতুলে খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে শুধু সংক্রমণ নয়, ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।

৫. নার্ভের কর্মক্ষমতা বাড়ে:
বি কমপ্লেক্স হল এমন ভিটামিন, যা ব্রেন ফাংশনের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এই ভিটামিনটি শরীরে প্রবেশ করা মাত্র নার্ভ সেলের শক্তি বাড়তে শুরু করে।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই কগনেটিভ ফাংশনে উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তিও বাড়তে শুরু করে। প্রসঙ্গত, তেঁতুলে বি কমপ্লেক্স ভিটামনিটি রেয়েছে প্রচুর মাত্রায়।
তাই তো পড়াশোনা হোক কী কর্মজীবন, যে কোনও ফিল্ডে যদি উন্নতি করতে হয় তাহলে তেঁতুল খাওয়া মাস্ট!

৬. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়:

তেঁতুলে উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে।
ফলে হজম শক্তির বৃদ্ধি ঘটতে একেবারে সময় লগে না। এখানেই শেষ নয়, তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় “বিলিয়াস সাবস্টেন্স” যা খাবার হজমের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
ফলে বদ-হজমের আশঙ্কা হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, একাদিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে ক্রনিক কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা দূর করতেও তেঁতুল দারুন কাজে আসে।
এক কথায় পেটের ভেতরে ঘটে চলে ছোট-বড় প্রতিটি কাজ যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে এই ফলটি।
ফলে যে কোনও ধরনের পেটের রোগ হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।

৭. রক্ত প্রবাহের উন্নতি ঘটে:

তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, যা শরীরে লহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত দেহের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এমনটা হওয়ার কারণে একদিকে যেমন প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি অ্যানিমিয়ার মতো রোগও দূরে পালায়।
প্রসঙ্গত, আমাদের দেশের মহিলাদের মধ্যে সিংহভাগই অ্যানিমিয়ার শিকার।
তাই এদেশে তেঁতুল খাওয়া প্রয়োজনীয়তা যেন আরও অনেক বেশি, সে বিষযে কোনও সন্দেহ।

৮. ওজন হ্রাসে সাহায্য করে:
মশলা হিসেবে তেঁতুলকে কাজে লাগালে শরীরে হাইড্রোক্সিসিট্রিক অ্যাসিড বা এইচ সি এ-এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
এই উপাদানটি শরীরে উপস্থিত অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে সার্বিকভাবে ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এখানেই শেষ নয়, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে তেঁতুল খাওয়া শুরু করলে শরীরে ফাইবারের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
ফলে ক্ষিদে কমে যায়।আর একবার কম খাওয়া শুরু করলে ওজন কমতে সময় লাগে না।

৯. চুল পড়ার হার কমে:

অতিরিক্তি হেয়ার ফলের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে আজ থেকেই তেঁতুলকে কাজে লাগিয়ে চুলের পরিচর্যা শুরু করুন।
দেখবেন হেয়ার ফল একেবারে কমে যাবে। ফলে অসময়ে মাথা ফাঁকা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও কমবে। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে ১৫ গ্রাম তেঁতুল নিয়ে ১০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
তারপর তেঁতুলটা ভাল করে স্কাল্পে এবং চুলে লাগিয়ে গরম টাওয়াল দিয়ে চুলটা ঢেকে নিতে হবে।
৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর শ্যাম্পু দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফলতে হবে মাথাটা।
সপ্তাহে ২ বার এই ঘরোয়া টোটকাটিকে কাজে লাগালে দেখবেন চুল পড়ার হার একেবারে কমে যাবে।

Related Posts

তীব্র গরমে মাত্র ৫ মিনিটে ঘর ঠাণ্ডা করার সহজ কয়েকটি উপায়…

গরম থেকে বাঁচতে এখন এসির ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু নানা কারণে অনেকে এসি ব্যবহার করতে পারেন না। আবার গরমে দৈনন্দিন জীবনে অস্বস্তিতে ফেলেছে। ঘর ঠান্ডা রাখতে…

রান্নাকে সুস্বাদু করার সাতটি ম্যাজিক ট্রিক্স

রান্না একটি শিল্প৷ কিন্তু সবসময় নিপুন হয় না শিল্পকর্ম৷ ঠিক তেমনই রাঁধুনীও সব রান্না সবসময় সুস্বাদু করতে পারেন না৷ অথবা সবসময় মনোসংযোগ ঠিক হয় না৷ তার ফলে…

জানেন কি এইসব খাবার মাইক্রোওয়েভে গরম করলে বিপদ হতে পারে?

প্রতিদিন বাজার করে টাটকা খাবার খাওয়ার মতো সময় এখন আর আমাদের নেই। একবারে অনেক খাবার কিনে রেফ্রিজারেটরে রাখা আবার সেই খাবার রান্না করে ফ্রিজিং। তারপর যখন দরকার…

উৎসবে হোক স্বাস্থ্যকর রসনাবিলাস, জেনে নিন কিছু টিপস!

আসুন জেনে নিই সুস্থভাবে নির্বিঘ্নে উৎসব উদযাপন করার জন্য আপনার রসনাবিলাস কেমন হতে পারে সেই সংক্রান্ত কিছু দরকারি টিপস। ১) উপকরণ বাছাইয়ে সচেতন হোন মেন্যুটি যেন স্বাস্থ্যসম্মত…

তরমুজ মিষ্টি কিনা চিনবেন যেভাবে!

তরমুজ কিনতে গিয়ে ঠকে যান অনেকে। বুঝতে পারেন না কোনটি মিষ্টি ও খেতে সুস্বাদু তরমুজ। অনেক তরমুজ ফ্যাকাশে, খেতেও পানসে হয়।তাই দেখে শুনে তরমুজ কিনুন। আসুন জেনে…

খিচুড়ি ঝরঝরে করবেন যেভাবে

ভুনা খিচুড়ি রান্না করতে যা যা লাগবে ১) ১ কাপ বাসমতি চাল ২) আধা কাপ মুগডাল ৩) পাঁচফোড়ন ৪) আদা কুচি ৫) সয়াবিন তেল ৬) লবন ও…